ঘটনা জানুয়ারি মাসের। দুবাই থেকে একটি প্লেন এসেছে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সেখানে একটি সুটকেসের মধ্যে ছয়টি পুরনো ধাঁচের চকচকে টাইলস পাওয়া গেল। সঙ্গে যে কাগজপত্র পাওয়া গেল তাতে লেখা আছে, টাইলসগুলো সারজাহ থেকে কেনা হয়েছে ৩১৫ দিরহাম দিয়ে। কিন্তু সন্দেহ হলো যুক্তরাজ্যের সীমান্তরক্ষীদের। এত পুরনো আর উজ্জ্বল টাইলসের দাম মাত্র ৩১৫ দিরহাম! মানে ৭০ পাউন্ড? হতেই পারে না। তারা যোগাযোগ করলেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সঙ্গে। 'টাইলসগুলো পরীক্ষা দেখুন তো, আসল কি না?'
ব্রিটিশ জাদুঘরের জ্যেষ্ঠ কিউরেটর সেন্ট জন সিম্পসন টাইলসগুলো দেখে আঁতকে ওঠেন। 'টাইলসগুলো খুবই প্রাচীন আর মূল্যবান মনে হচ্ছে। এগুলোর মূল্য কমপক্ষে কয়েক হাজার পাউন্ড হওয়ার কথা।' বললেন তিনি। তারপর টাইলসগুলো পরীক্ষা করার জন্য মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে এক ডজন বিশেষজ্ঞ ডেকে আনলেন। জন সিম্পসন বলেন, এই মহামারী উপেক্ষা করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, টাইলগুলোর বয়স অনেক। এগুলো ১৩ শতক থেকে ১৪ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি করা। নির্মাণশৈলী দেখে বোঝা যাচ্ছে, টাইলসগুলো উজবেকিস্তানের। চেঙ্গিস খানের শাসনামলের টাইলসগুলো সম্ভবত সমরখন্দের কোনো কমপ্লেক্সে ব্যবহার করা হয়েছিল।
টাইলসগুলো ছিল তিনরঙা—সাদা, ফিরোজা এবং নীল। প্রত্যেকটিতেই পবিত্র কোরানের শিলালিপি রয়েছে। উজবেকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেন যে, টাইলসগুলো সমরখন্দের নিকটবর্তী শাহ-ই জিন্দা মেমোরিয়াল কমপ্লেক্সে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৯৬ এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে তারা ওই কমপ্লেক্সের সন্ধান পায়। সেখানে কয়েকটি টাইলস নিখোঁজ ছিল।
ব্রিটিশ জাদুঘরের কিউরেটর সিম্পসন বলেন, শাহ-ই জিন্দা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পর্যটন স্থানও বটে।
ব্রিটিশ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ টাইলগুলো উজবেকিস্তানের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তার আগে আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী দু তিন মাস ব্রিটিশ জাদুঘরে টাইলসগুলোর প্রদর্শনী হবে। ব্রিটিশ জাদুঘরের পরিচালক হার্টভিগ ফিশার বলেন, সাংস্কৃতিক পণ্যের অবৈধ ব্যবসা সনাক্তকরণ ব্রিটিশ জাদুঘরের অন্যতম একটি কাজ। বিগত দশ বছরে আমরা অন্তত আড়াই হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু ইরাক, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ফিরিয়ে দিয়েছি।
টাইলগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ জাদুঘর ও যুক্তরাজ্য সীমান্তরক্ষীদের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রুস্তামভ। তিনি বলেন, প্রাচীন নিদর্শনের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে এখন থেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে উজবেকিস্তানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
প্রকাশ : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৪ নভেম্বর ২০২০
0 Comments
Post a Comment