ব্যবসার দিক থেকেও মায়েরা বাবাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। আমেরিকার ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন জানাচ্ছে, এবছর বাবা দিবসে আমেরিকায় বেচাবিক্রি হয়েছে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার, অন্যদিকে মা দিবসে ব্যবসা হয়েছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার! অর্থাৎ মায়েরা এগিয়ে।

মা দিবসে ব্যবসার গ্রাফ সবসময় উর্ধ্বমূখী হলেও বাবা দিবসে তা মাঝে মাঝে ওঠানামা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছে যে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাবা দিবসে ব্যবসার গ্রাফ ছিল নিম্মমূখী। ২০১১ সাল থেকে এটি একটু একটু করে উপরের দিকে উঠতে থাকে, তবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে হঠাৎ করে পড়ে যায়। আবার ২০১৬ সালে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে এবং এ বছরে সেটি ১৬ বিলিয়ন ডলারের চূড়া স্পর্শ করে। বলে রাখা ভালো, ২০০৭ সালে এটি ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার।

এর নাম ভোক্তা অর্থনীতি। মানুষের জীবনযাপনকে বাণিজ্যিক সামিয়ানার নিচে নিয়ে আসাই এর কাজ। তাই তো আমরা দেখি, মা দিবস, বাবা দিবস, ভালোবাসা দিবস, ধন্যবাদজ্ঞাপন দিবস, হ্যান দিবস ত্যান দিবসে একটি বাণিজ্যিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে ব্যবসায়িক রথী-মহারথীরা। বাড়ি গাড়ির দোকান থেকে শুরু করে টুথপেস্ট ব্রাশ বিক্রেতা পর্যন্ত সকলেই এ কাজ করে।
তো লক্ষ্য পূরণ করার জন্য তারা কী করে? তারা বিভিন্ন পণ্যের ওপর মূল্যে ছাড় দেয়। যেমন একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, এই ‘ফ্রি’র আলোয় সবচেয়ে বেশি আত্মাহুতি দেন রমনীকূল। ব্যাপারটা এমন, একটি বৃহদাকার জলহস্তীর সঙ্গে যদি ছোট একটা প্লাস্টিকের বাটি ফ্রি দেওয়া হয়, তবে ওই বাটির জন্যই রমনীকূল হাতি কিনে ফেলেন! আর এই কৌশলকে দিবসগুলোতে সুন্দরভাবে বাংলাদেশে ব্যবহার করে আগোরা, মীনা বাজার, স্বপ্ন’র মতো দোকানগুলো।

তা করুক। পুঁজির আগ্রাসন ঠেকাবে, সে সাধ্য কার! শুধু বিনয়ের সঙ্গে এটুকু বলি, এসব দিবসের পেছনে যে মর্মস্পর্শী ইতিহাস আছে সেসব যেন ভুলে না যাই।

একটি ইতিহাস এরকম: ১৯০৭ সালে আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক কয়লাখনিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। মারা যায় ৩৬২জন শ্রমিক। পরের বছর ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় ঐ দুর্ঘটনায় নিহত বাবাদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেই থেকে শুরু বাবা দিবসের।

আরেকটি ইতিহাস বলছে, আমেরিকার এক যুদ্ধফেরত সৈনিক ছিলেন, যার নাম উইলিয়াম স্মার্ট। ছয়টি ছোট ছোট সন্তান রেখে তার স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। তারপর সন্তানদেরকে মানুষ করতে প্রাণপন লড়াই করেছেন স্মার্ট। বিয়ে থা পর্যন্ত করেননি। পরে ১৯১০ সালে স্মার্টের এক কন্যা সনোরা, উদ্যোগ নেয় তার মহান পিতাকে সংবর্ধনা জানানোর। চার্চের কাছে আবেদন জানায় সনোরা। চার্চ সম্মতি দেন ১৯ জুন রোববার অনুষ্ঠানটি করার।

তো যা বলছিলাম আর কি, ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে এই ইতিহাসগুলোও যেন একটু মনে রাখি।

পোস্টম্যান ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ; ১৮ জুন, ২০১৯